শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪
Online Edition

মত প্রকাশের কারণে হত্যা সংবিধানের ওপর আঘাত ---------  ড. কামাল

বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে গণফোরাম আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন -সংগ্রাম

 

স্টাফ রিপোর্টার: গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, মতপ্রকাশের কারণে কোনো নাগরিককে পিটিয়ে হত্যা করা সংবিধানের ওপরে আঘাত। সংবিধানে আমাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। যে কেউ তার মত প্রকাশ করতেই পারেন। যারা আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করেছে তাদেরকে আমি ছাত্র বলবো না, তারা পশু। তারা (হত্যাকারীরা) পশুর মতো আচরণ করেছে। তারা জানোয়ারের থেকেও নিকৃষ্ট। দেশের ছেলেদেরকে পশুতে পরিণত করা হচ্ছে। ভয়াবহ একটা অবস্থা! এটা থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে। একইসাথে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার হত্যার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন তিনি। 

গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে গণফোরাম আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার বিচারের দাবিতে ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রেক্ষিতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে গণফোরাম। এ সময় সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সায়ীদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য মেজবাহ উদ্দিন, মহসীন রশিদ, মোকাববির খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিন আহমেদ আফসারি, মোস্তাক আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক লতিফুল বারি হামিম প্রমুখ।

আবরার হত্যার উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত দাবি করে ড. কামাল হোসেন বলেন, তদন্ত করে সত্যিকারের ঘটনা উদ্ঘাটন করতে হবে। এটা কোনো দলীয় বক্তব্য নয়। ১৬ কোটি মানুষের একজন হিসেবে আমি এই দাবি জানাচ্ছি। তিনি বলেন,  লেজুড়বৃত্তি করা ছাত্ররাজনীতি আমরা কোনদিনই চাই না। তবে স্বাধীন ছাত্ররাজনীতি থাকতে পারে। 

এক প্রশ্নের জবাবে ড.কামাল বলেন, সরকারের দুর্নীতি, লুটপাট, ভিন্নমত সহ্য করতে না পারা ও দেশের গণতন্ত্রহীনতার দায়ে দলীয় এমপিদের সংসদ থেকে পদত্যাগের বিষয় নিয়ে তারা ভাবছেন। দলীয় ফোরামে আলোচনা করে  এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জানান গণফোরাম সভাপতি।

তিনি বলেন, ১০-১২টা ছেলে, এদেরকে আমি ছেলে বলব না; তারা যা ঘটিয়েছে, কোনো জন্তু জানি না, এইভাবে একটা নিরীহ লোককে পিটিয়ে হত্যা করে কি-না। তারা রুগ্ন। যারা রুগ্ন, তারাই এই কাজ করতে পারে। আমি এগুলো কল্পনা করতে পারি না। এই দেশকে বাঁচাতে হবে। এই দেশে পরাধীন আমলে যে ঘটনা ঘটেছে, সেই ধরনের ঘটনা আবার আমাদের এখানে ঘটবে। সেটা আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না।

গণফোরাম সভাপতি বলেন, যেভাবে একটি মেধাবী ছেলেকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে, তাতে আমরা উদ্বিগ্ন। এ রকম ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তারা জানোয়ার, জানোয়ারের থেকেও নিকৃষ্ট। যে রাজনীতি ছেলেদের পশুতে পরিণত করেছে, তা থেকে দেশের শিক্ষাঙ্গনকে মুক্ত করতে হবে।

ড. কামাল অভিযোগ করে বলেন, দেশ আজ ধ্বংসের মুখোমুখি । জনগনের মালিকানা জোরপূর্বক ছিনতাই করে ক্ষমতা দখলের কারণে আজ গণতন্ত্রের শেষ চিহ্নটুকুও মুছে যেতে বসেছে। দেশে সুশাসন নেই। সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য রাষ্ট্রের সকল অঙ্গ ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা হয়েছে। গণতান্ত্রিক নূন্যতম ব্যবস্থার পরিবর্তে কর্তৃত্ববাদী শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ক্ষমতা কেন্দ্রীভুত দুর্নীতির মহাউৎসব আজ দৃশ্যমান।

তিনি বলেন, ভিন্নমত দমন, মিথ্যা মামলা, গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যা, সভা সমাবেশ করতে বাধা নিষেধ ও ডিজিটাল নিরাপত্তার মতো আইন তৈররি মাধ্যমে সরকার প্রকাশ্যে জনগনের মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করেছে। সরকারের ছত্রছায়ায় গুটিকয়েক চক্র কোটি কোটি টাকা ব্যাংক লুট, টেন্ডারবাজি করেছে আর্থিক ভাগাভাগি নিয়ে খুনখারাবি চালাচ্ছে। দেশ আজ ক্যাসিনো সংস্কৃতি চালু হয়েছে। মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নেই।

তিনি বলেন, শিক্ষা অঙ্গনে সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠে ভাইস চ্যান্সেলর হতে শুরু করে শিক্ষক থেকে পিয়ন পর্যন্ত আজ দুর্নীগিগ্রস্ত। এসব থেকে দেশবাসী পরিত্রান চায়।

এ সময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী এমন বেপরেয়া হয়ে উঠেছে যে, তারা আজ ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের মতো আচরণ করছে। হলে হলে টর্চার সেল। বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন মহিলা কলেজ, ঢাকা কলেজের হােস্টেলগুলোতে টর্চার সেল রয়েছে। টার্গেটে থাকা শিক্ষার্থীকে টর্চার করার আগে দেয়া হয় বিরোধী কোনো সংগঠনের তকমা। এটা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক, রাজনৈতিক ভ-ামি ও কৌশলী প্রতারণা।

সুব্রত চৌধুরী বলেন, সার্বিকভাবে বিশ্লেষণ করলে দেশ আজ ধ্বংসের মুখোমুখি। জনগণের মালিকানা জোরপূর্বক ছিনতাই করে ক্ষমতা দখলের কারণে আজ গণতন্ত্রের শেষ চিহ্নটুকুও মুছে যেতে বসেছে। সুশাসন ও জবাবদিহিতা নেই। শুধুমাত্র ক্ষমতায় টিকে থাকার লক্ষ্যে রাষ্ট্রের সকল অঙ্গ ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা হয়েছে। গণতান্ত্রিক ন্যূনতম ব্যবস্থার পরিবর্তে কর্তৃত্ববাদী শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ক্ষমতা যেখানে কেন্দ্রীভুত দুর্নীতির মহোৎসব সেখানে দৃশ্যমান। বর্তমান ভিন্নমত দমন, মিথ্যা মামলা, গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যা, সভা-সমাবেশে বাধা-নিষেধ, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তৈরির মাধ্যমে সরকার প্রকাশ্যে জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করেছে। দেশে আজ ক্যাসিনো সংস্কৃতি। মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ